ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন প্রক্রিয়া বেশ কঠিন হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ ব্যাপারে বেশ কঠোর হয়েছে। তবে এটি শুধুমাত্র অবৈধ অভিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য। যারা বৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করছে তাদের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া বেশ সহজ। তবে সম্প্রতি এক্ষেত্রেও নিয়ম-কানুন বেশ জোরালোভাবে প্রয়োগ করছে ইউরোপের বহু দেশ। এক্ষেত্রে কোনো বৈধ অভিবাসী যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে তার ভিসা ও বসবাসের অনুমতি বাতিল হতে পারে। সম্প্রতি রোমানিয়ায় ৯ বাংলাদেশির ভিসা ও বসবাসের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। চলুন জেনে নিই রোমানিয়ায় যে কারণে ভিসা ও বসবাসের অনুমতি বাতিল হয়।
রোমানিয়ায় বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের যাবতীয় আইনি কাঠামো একটি বিশেষ অধ্যাদেশ বা ওইউজির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই অধ্যাদেশের ১৯৪/২০০২ ধারার সংশোধিত বিধান অনুযায়ী বিদেশিদের প্রবেশ, থাকার অধিকার এবং বাধ্যবাধকতাগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়।
দীর্ঘমেয়াদি ভিসার আবেদন যেসব কারণে বিবেচনায় নেয়া হয় না
- যেসব অভিবাসীরা স্বল্পমেয়াদি ভিসা ও বসবাসের অনুমতি থেকে দীর্ঘমেয়াদি অনুমতির জন্য আবেদন করেন, তারা যদি সকল শর্ত পূরণ না করেন সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘমেয়াদি অনুমতি দেয়া হয় না।
- দীর্ঘমেয়াদি অনুমতি ও ন্যাশনাল ডি ভিসার আবেদনের সময় কোন আবেদনকারী যদি মিথ্যা তথ্য, জাল নথি বা অন্য কোনো অবৈধ উপায় ব্যবহার করেন, তাহলে আবেদন বাতিল করা হয়। কিংবা রোমানিয়া আসার পর প্রমাণিত হলে প্রাপ্ত ভিসা অথবা বসবাসের অনুমতি বাতিল করা হয়।
- পূর্বে রোমানিয়ার ভূখণ্ড থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বা বহিষ্কার করা হয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য পরিচয়ে আবারও আবেদন করলে সেটির পরিবর্তে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয় না।
দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ও স্থায়ী বসবাসের অনুমতি
রোমানিয়া জেনারেল ইনস্পেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (আইজিআই) বিভিন্ন কারণে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা, স্থায়ী বসবাসের অনুমতি ও বসবাসের অধিকার প্রত্যাহার করে। সেগুলো হলো—
- কোনো অভিবাসী স্থানীয় বাসিন্দাদের জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি অথবা পাঁচ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন তাহলে তার সকল প্রকার বসবাসের অনুমতি প্রত্যাহার করা হয়ে থাকে।
- রোমানিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ কোনো কাজে যুক্ত হলে।
কাজের অনুমতি ও অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি
রোমানিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের মুক্ত চলাচলের অঞ্চল শেনজেন জোনে প্রবেশের জন্য চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি ক্রোয়েশিয়ার আবেদন গ্রহণ হলেও বাতিল হয়েছে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার আবেদন। ইইউর শর্ত পূরণে স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন ভিসা নিয়ে আসা অভিবাসীদের নিয়ে রোমানিয়ার বেশ কড়া নজরদারি রয়েছে।
কাজের ভিসা ও অন্য যেকোনো স্বল্পমেয়াদি ভিসায় আসা ব্যক্তিদের বসবাসের অধিকার বিভিন্ন কারণে বাতিল হতে পারে। সেগুলো হলো—
- রোমানিয়া থেকে অবৈধভাবে দেশটির রাষ্ট্রীয় সীমান্ত অতিক্রম করে শেনজেন বা কোনো দেশের প্রবেশের চেষ্টা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ জাতীয় কাজে জড়িত ব্যক্তির সকল প্রকার বসবাসের অনুমতি ও ভিসা বাতিল করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিধান রয়েছে।
- কাজের অনুমতি ভিসা নিয়ে আসা অভিবাসীরা রোমানিয়ায় বিদেশিদের কর্মসংস্থানের প্রবিধান লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাজের ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়। যেমন রোমানিয়ার যে কোম্পানিতে এসেছেন সেটিতে কাজে যুক্ত না থেকে অন্য কোথাও কাজে যোগ দিলে।
- প্রথম কোম্পানির এনওসি ছাড়া আবার নতুন করে অন্য কোম্পানিতে কাজে যোগ দিলে একজন ব্যক্তি ভিসা প্রত্যাহার ও নিজ দেশে ডিপোর্টের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
- রোমানিয়ার জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে এমন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা গ্রহণ না করেন সেক্ষেত্রে তার অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি বাতিল করা হয়।
- ইইউ ব্লু কার্ড, আইসিটি এবং মৌসুমি ভিসায় আসা অভিবাসীদের রোমানিয়ার সামাজিক সুবিধা গ্রহণের আগে অবশ্যই লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে। নাহলে একজন ব্যক্তি বসবাসের অধিকার হারাতে পারেন।
- কোনো অভিবাসী রোমানিয়ার নাগরিকত্বের আবেদন করলে এবং নাগরিকত্ব গ্রহণের পরে আগের সব বসবাসের অনুমতি বাতিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
উচ্চশিক্ষা
উচ্চশিক্ষার জন্য রোমানিয়ায় আসা শিক্ষার্থীরা প্রথমে এক বছর মেয়াদি অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি বা টিআরসি কার্ড পেয়ে থাকেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র অসুস্থতাজনিত যৌক্তিক কারণে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের পড়াশোনা সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারবেন। এছাড়া অন্য কোনো কারণে পড়াশোনা বন্ধ করে দিলে টিআরসি কার্ড বাতিল করে নেয়া হয়।
এছাড়া ডিগ্রি শেষে প্রাপ্ত বসবাসের অনুমতির জন্য চাকরিসহ যেসব শর্ত দেয়া হয়, সেগুলো পূরণ করতে না পারলে দেশটিতে স্থায়ী হওয়া যায় না।
আবার রোমানিয়ার নাগরিককে বিয়ের মাধ্যমে বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি যদি আইনি শর্ত ছাড়া এক বছরের মধ্যে ছয় মাসের বেশি রোমানিয়ায় অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তার টিআরসি কার্ড বা স্বল্পমেয়াদি অনুমতি বাতিল করা হয়।
গত বছরের (২০২২ সাল) শুরু থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচারের বিরুদ্ধে দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছে বুখারেস্ট কর্তৃপক্ষ। শেনজেন সীমান্ত থেকে এবং কাজের অনুমতির নিয়ম না মানায় আটক করা হয়েছে একাধিক বাংলাদেশিকে। নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে অনেক বাংলাদেশিকে।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস