উইক এন্ড বা সপ্তাহ শেষের আজ সকালে দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনী’র লেপিংটনে যাওয়ার পথে প্রথমেই দেখলাম NSW Rural Fire Services এর স্ট্যাটিক ডিসপ্লে। এরপর লেপিংটনের এমারেল্ড হিলস প্রজেক্টর Matilda Road এ গাড়ি থামালাম। দেখি, সুরেলা সুরে পিয়ানোর টুং টাং আওয়াজে একটা হলুদ রঙের আইসক্রিমের ভ্যান গাড়ি সামনের ফাঁকা প্রিন্স রিজ রোড ধরে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে উপরের দিকে। প্রায় ২০ মিটার দূর থেকে গাড়িটার ছবি তোলার সময় গাড়ির চালক মহিলা আমার দিকে হাত নেড়ে একটা ’হাই’ দিলো!!
সিডনীতে আইসক্রিমের দোকানে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য, শীত-গ্রীষ্মের তেমন কোন বাছ-বিচারের বালাই নেই বললেই চলে। তবে, শীতের পরই তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে পাড়ায় পাড়ায় ঘন্টি বাজিয়ে আইসক্রিমের ভ্যানগাড়ির আনাগোনা বাড়তে শুরু করে। শনিবার ছিল তেমনই একটা দিন। ভোর বেলায় ১৪/১৫° সেন্টিগ্রেডের মনোরম আবহাওয়া থাকলেও, বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭°/২৮° সেন্টিগ্রেড। এর সাথে মেঘলা আকাশে আদ্রতার কারণে, দুপুরের দিকে বেশ ভ্যাঁপসা গরমও ছিল।
আইসক্রিম?
যদিও আমি সুগারের ভয়ে আইসক্রীম পারত:পক্ষে খাই না। কিন্তু চনমনে গরমে আইসক্রিমের ভ্যানটা দেখার সাথে সাথে ভাবলাম, একটা আইসক্রিম খেলে মন্দ হয় না। কিন্তু ততক্ষণে ভ্যানগাড়ি আমার দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে গেছে। মিনিট পাঁচেক অপেক্ষার পর আবার দেখি টুংটাং পিয়ানোর শব্দে আইসক্রীমের ভ্যানগাড়িটা আমার দিকেই আসছে। আমি দেরি না করে হাত উঁচু করতেই রাস্তার একপাশে গাড়িটা দাঁড়িয়ে পড়ে। এরপর ভ্যানের বামপাশে খোলা কাউন্টারে এসে দাঁড়ায় বছর তিরিশের একজন চোখ ধাঁধানো উচ্ছল সাদা অস্ট্রেলিয়ান মহিলা!! ভ্যানিলা আইসক্রিমের মতই সাদা পোলো শার্ট আর ক্রিম কালারের জিন্স পরা, এই মহিলার পাশের সিটে বসে রয়েছে ৬/৭ বছরের ফুটফুটে একটা ছেলে। সম্ভবত এই মহিলাই ছেলেটার মা।
গাড়ি থামিয়ে দুটি সিটের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা দিয়ে, সুন্দরী মহিলাটি ভ্যানের পেছনে কাউন্টারের খোলা জানালায় এসে আমাকে আবারো বললো “হা…ইইই”!! প্রতি উত্তরে আমিও একটা হা-ই দিয়ে জানতে চাইলাম, কি কি আইসক্রিম আছে তার দোকানে? আমার প্রশ্ন শুনে সে নিজের গলাটা কাউন্টারের বাইরে একটুখানি বের করে, ভ্যানগাড়ির গায়ে প্রিন্ট করা মেনু দেখিয়ে জানতে চাইল আমার কি পছন্দ।
আমি এক নজরে গাড়ির গায়ে ছাপানো মেনুর পোস্টার কার্ড দেখে একটা স্মল সাইজ নাট স্প্রিঙ্কল ভেনিলা কোণ আইসক্রিমের অর্ডার দেই। মাত্র এক মিনিটেই মেশিন চেপে একটা কোন আইসক্রিম আমার হাতে দেয়ার পর এর দাম ৫ ডলার মিটিয়ে দিয়ে, আইসক্রিমটা হাতে নিয়েই আমি পড়লাম মহাবিপদে!!
তারপর?
বসন্তের ভ্যাঁপসা গরম বাতাসে আমার আইসক্রিম অবিরাম গলে পড়তে থাকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে হাতের চারদিকে।
এরই মধ্যে গিন্নী আমার হঠাৎ করে আইসক্রীম কেনার উদ্দেশ্য জানতে চেয়ে রহস্যের খোঁজে এক

বার তাকিয়ে দেখে সুন্দরীকে, একবার দেখে আমাকে!!
তখনই বুঝলাম আইসক্রিমটা গলে যাওয়ার জন্য আজকের আবহাওয়াটা আসলেই বেশ গরম ছিল!!
- মহিউদ্দিন কিবরিয়া, সিডনী, অস্ট্রেলিয়া।